Labels

Friday, December 18, 2020

নিউরনের সুস্বাস্থ্যে সু–অভ্যাস চর্চা, সানজিদা আফরোজ

 "আমাদের মস্তিষ্ক শত শত কোটি নিউরন দিয়ে গঠিত। আর এই নিউরনগুলো একে-অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে, যার ফলে আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি। আমাদের মস্তিষ্কে যে ‘নিউরোনাল সংযোগ’ রয়েছে, প্রতিনিয়ত তার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পুনর্গঠন চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে বলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি। একজন মানুষের নিউরোপ্লাস্টিসিটি ঘটে ব্যক্তিজীবনের উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা ও পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে মস্তিষ্কে নিউরনের নতুন নতুন সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে।

আগে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মনে করতেন, এই নিউরোপ্লাস্টিসিটির বিকাশ ঘটে শুধু শৈশবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এর অনেক কিছু প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও ঘটে থাকে। কেউ যদি দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, তাহলে এই নিউরোপ্লাস্টিসিটি ব্যাহত হয়। এর প্রভাব শুধু আমাদের চিন্তা ও স্মৃতির ওপরই পড়ে না, বরং বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যাও হতে পারে, যেমন বিষণ্নতা, উদ্বেগ, মুড ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

নিউরোপ্লাস্টিসিটি বজায় রাখার জন্য আমাদের কোনো না কোনো কাজের মধ্যে থাকা জরুরি। নিত্যনতুন সৃজনশীল কাজ করলে মস্তিষ্কে নতুন নতুন সংযোগ স্থাপিত হয় এবং এই প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে। বিখ্যাত স্নায়ুবিজ্ঞানী Donald Hebb বলেছেন “Neurons that fire together, wire together”। অর্থাৎ যখন একগুচ্ছ নিউরন সক্রিয় হয় তখনই কেবলমাত্র একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত হয়। আর এই সংযোগের ফলে নিউরনের কাঠামোর যে পরিবর্তন হয় সেটার প্রভাব পড়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া করব তার উপর। সুতরাং বলা যায় আমাদের চিন্তা, অনুভূতি এবং কাজের ফলে নিউরনের গাঠনিক পরিবর্তন হয় প্রতিনিয়ত। শৈশবে আমরা বিভিন্ন চাপমূলক পরিস্থিতিতে যে প্রতিক্রিয়া করতাম প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও আমরা অনেকেই একই রকম প্রতিক্রিয়া করে থাকি। তবে এই প্রতিক্রিয়ারও ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারি প্লাস্টিসিটির মাধ্যমে আর এভাবে আমাদের মতিস্ককে সদা-কার্যকর রাখতে পারি। সে জন্য কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই জরুরি:
শারীরিক ব্যায়াম: প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়বে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক শক্তি পাবেন। ফলে নিউরন-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন: নিউরোপ্লাস্টিসিটি বজায় রাখার ক্ষেত্রে নতুন দক্ষতা অর্জনের ভূমিকা অপরিসীম। যেমন ভিন্ন ভাষা, সাঁতার, ছবি আঁকা, সাইকেল চালানো, গাড়ি চালানো, নাচ, গান শেখা ইত্যাদি।
গুণগত ঘুম: প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। নিউরোপ্লাস্টিসিটির ক্ষেত্রে গুণগত ঘুম বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা: দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাধাগ্রস্ত হয়। তাই মানসিক চাপের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সচল রাখুন এবং জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলুন। মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার অনেক ধরনের উপায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নিজেকে সময় দেওয়া। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে পাঁচ মিনিট হলেও নিজেকে সময় দিন। সেই সময়টাতে যে কাজটি করে আপনার মানসিক প্রশান্তি মেলে, সেই কাজটি করুন।
বই পড়া ও লেখালেখি: প্রতিদিন কিছুটা সময় অন্তত বই পড়ুন। বই পড়া ও লেখালেখির মাধ্যমে মস্তিষ্কে নিউরনের সংযোগ পুনর্গঠন করতে পারবেন।
নেতিবাচক ধারণা পরিহার: আমরা বেশির ভাগ সময় নেতিবাচক চিন্তা ও ধারণাগুলোকে লালন-পালন করে থাকি। আর এটা নিউরোপ্লাস্টিসিটির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নেতিবাচক দিকের ওপর মনোযোগ না দিয়ে, বরং সেই ঘটনা থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলেন, তা নিয়ে ভাবুন। সেখানে যদি আপনার কোনো অর্জন থাকে, তা যত ছোটই হোক না কেন, সেটির জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করুন। এর ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বাড়বে।"
--------- সানজিদা আফরোজ, মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলর, ল্যাব এইড হসপিটাল, ঢাকা

0 comments:

Post a Comment